মাথা ব্যথা কেন হয় - মাথা ব্যাথা হলে করণীয় কি

প্রিয় পাঠক বৃন্দ, আসসালামু আলাইকুম। আশা করি আপনারা সবাই ভাল আছেন। আজকে আপনাদের সামনে নতুন একটি পোস্ট নিয়ে উপস্থিত হয়েছি। যেখানে আলোচনা করবেো মাথা ব্যথা কেন হয়, মাথা ব্যথা হলে করণীয় কি ইত্যাদি বিষয় সম্পর্কে। তাহলে চলুন জেনে নেই মাথা ব্যথা কেন হয় এবং মাথা ব্যথা হলে করণীয় কি।

মাথা ব্যথা কেন হয়
বর্তমানে আমাদের দেশে বেশিরভাগ মানুষই প্রায় মাথা ব্যথার সমস্যায় ভুগছেন। এই সমস্যা থেকে মুক্তির জন্য আপনার কি কি করণীয় এই সম্পর্কে আজকের পোস্টটিতে আলোচনা করা হয়েছে। তাই পোস্টটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।

ভূমিকা

বর্তমানে মাথাব্যথা আমাদের জীবনের যেন একটি অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আপনি একটা জিনিস খেয়াল করে দেখবেন যখন আপনার মাথা ব্যাথা শুরু হবে তখন আপনি কোন কাজই সুষ্ঠুভাবে করতে পারবেন না। আপনার পুরোপুরি অস্বস্তিবোধ লাগবে। 

এমন সময় আমরা যে কাজটা করি মাথা ব্যাথার ওষুধ খাই। যে ওষুধ সাময়িক সময়ের জন্য আমাদের মাথা ব্যথা কমিয়ে দেয়। তবে মাথা ব্যথার ওষুধ খাওয়া খুবই ক্ষতিকর। কিন্তু আপনি যদি মাথা ব্যথা কেন হয়, মাথা ব্যথা হলে করণীয় কি এই বিষয়গুলো সম্পর্কে জানেন। 

তাহলে মাথা ব্যথা খুব সহজেই দূর করতে পারবেন। তাই চলুন মাথা ব্যথা সম্পর্কে কিছু তথ্য জেনে নেই।

মাথা ব্যথা কেন হয়

আমরা মাথা ব্যথা বলতে- মাথা ও ঘাড়ের ব্যথাকেই বুঝে থাকি। আমাদের মাঝে অনেকেই আছে যারা প্রচন্ড মাথা ব্যথা হলেই মনে করে মাথায় বাজে কোন অসুখ হয়েছে। কিন্তু তাদের এই ধারণাটি সম্পূর্ণ ভুল। এই ভুল ধারণাটি ভেঙ্গে দেওয়ার জন্য আজকে আমরা মাথা ব্যথা কেন হয় এ সম্পর্কে আলোচনা করবো।

আরো পড়ুনঃ ফোড়া কেন হয়

মাথা ব্যথা হওয়ার মূলত অনেকগুলো কারণ রয়েছে। তার মধ্য আমাদের কাছে পরিচিত দুটি কারণ হলো-মাইগ্রেন ও টেনশন। এছাড়াও মাথা ব্যথা হওয়ার অনেকগুলো কারণ রয়েছে। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য কিছু কারণ নিচে উল্লেখ করা হলো-

  • অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা ও সঠিক সময়ের খাবার না খাওয়া।
  • গভীর রাত পর্যন্ত জেগে মোবাইল অথবা কম্পিউটার চালানো।
  • মানসিক কষ্ট ও পারিবারিক অশান্তি।
  • ঠান্ডা জাতীয় কোন অসুখ হলে।
  • মাথায় কোন অসুখ হলে যেমন-টিউমার, মাইগ্রেন, সিস্ট থাকলে মাথা ব্যথা হতে পারে।
  • চোখের সমস্যার কারণে মাথা ব্যথা হতে পারে।
  • অনেক সময় চোখের সমস্যার জন্য নতুন চশমা ব্যবহার করলে মাথা ব্যাথা হতে পারে। তবে চশমা ব্যবহার অভ্যস্ত হলে মাথা ব্যাথা সেরে যায়।
  • হার্টের সমস্যার জন্য মাথা ব্যথা হতে পারে।
  • মেয়েদের ঋতুস্রাবজনিত কারণে অনেক সময় মাথা ব্যথা হতে পারে।
  • হরমোনের ভিন্নতা ও জটিলতার জন্য অনেক সময় অনেকের মাথা ব্যথা হতে পারে।
  • অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ নিয়মমতো না খেলে অনেক সময় মাথা ব্যথা হতে পারে।
  • শারীরিক দুর্বলতার কারণে মাথা ব্যথা হতে পারে।
  • অতিরিক্ত গরম পড়লে মাথা ব্যাথা হতে পারে।
  • অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপের জন্য অনেক সময় মাথা ব্যথা করতে পারে।

উপরে উল্লেখিত কারণগুলো ছাড়াও মাথা ব্যথা করার আরো অনেক কারণ রয়েছে। যেগুলোর আপনারা অনলাইনে বিভিন্ন ওয়েবসাইটের মাধ্যমে জানতে পারবেন। আশা করি আপনারা মাথা-ব্যথা কেন হয় এই বিষয়টি বুঝতে পেরেছেন।

মাথা ব্যাথা কোন রোগের লক্ষণ

আমরা কম-বেশি সবাই মাথা ব্যাথার সমস্যায় ভুগি। মাথা ব্যথার সমস্যায় কখনোই ভোগেন নাই, এরকম মানুষ পাওয়া খুবই বিরল। আসলে মাথা ব্যথার নির্দিষ্ট কোন সংজ্ঞা নেই। আমরা সাধারণত মাথা ও ঘাড়ের ব্যথাকে মাথা ব্যথা হিসেবে চিনি। 

যেহেতু, মাথা ব্যাথা বেশিরভাগ মানুষেরই হয়, তাই এটি গুরুত্বপূর্ণ তেমন কোনো রোগ নয়। তবে কিছু কিছু মাথা ব্যাথা আছে যেগুলো মাথা ব্যথার বিভিন্ন রোগের লক্ষণ এর সংকেত দেয়। যে সকল মাথা ব্যথা বিভিন্ন রোগের লক্ষণ নির্দেশ করে তা নিচে উল্লেখ করা হলো।

  • যদি আপনার মাথা ব্যথা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তীব্রমাত্রায় বাড়তে থাকে তাহলে এই ধরনের মাথা ব্যথা জন্য সাধারণত ব্রেন টিউমার, সারকোইডোসিস, টিবি মেনিনজাইটিস, লিম্ফোমা বা অন্যান্য কর্কট রোগ হয়ে থাকে।
  • আপনাদের মাঝে যাদের হৃদরোগ, উচ্চমাত্রায় কোলেস্টেরলের , উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস এর সমস্যা আছে। তাদের ক্ষেত্রে হঠাৎ তীব্রমাত্রায় মাথা ব্যথা হলে সেটা স্ট্রোক, সাব-অ্যারাকনয়েড হেমারেজ ইত্যাদি রোগের নির্দেশ করে।
  • আপনি যদি জীবনে প্রথমবারের মতো মাথা ব্যথায় আক্রান্ত হন এবং সেই মাথা ব্যথা যদি তীব্রমাত্রায় চলে যায় তাহলে এটা থান্ডারক্ল্যাপ হেডেক রোগের নির্দেশ করে।
  • অতিরিক্ত মাথা ব্যথার জন্য আপনার শরীরে জ্বর, প্রচন্ড দুর্বলতা, গায়ে ফুসকুড়ি, ঘাড় শক্ত হয়ে যাওয়া এই সমস্যাগুলো হতে পারে।

আরো পড়ুনঃ পাছায় ফোড়া হলে করণীয়

সাধারণত মাথা ব্যথা ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে সেরে যায়। কিন্তু আপনার মাথা ব্যথা যদি এই সময়ের মধ্যে না সারে তাহলে আপনার শরীরে নিচে উল্লেখিত রোগের লক্ষণ দেখা দিতে পারে।

  •  মস্তিষ্কে টিউমার
  •  মস্তিষ্কের রক্ত জমাট বাধা
  •  ব্রেন টিউমার
  • দাঁতের সমস্যা
  •  জলশূন্যতা
  • উচ্চ  রক্তচাপ
  •  সংকোচন
  •  কার্বন -মনোক্সাইড বিষক্রিয়া
  • করোনা ভাইরাস সংক্রমণ
  •  স্টক
  •  পেনিক ডিসঅর্ডার
  • হ্যাং ওভার ইত্যাদি

আপনার মধ্যে যদি মাথা ব্যাথার এরকম সমস্যাগুলো দেখা দেয় তাহলে দ্রুত আপনি চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

ঘন ঘন মাথা ব্যাথার কারণ কি

আসলে এই পৃথিবীতে মাথা ব্যথাহীন মানুষ খুঁজে পাওয়া খুবই মুশকিল। মাথা ব্যথার নির্দিষ্ট কোন সংজ্ঞা নেই। তবে আমরা মাথা ও ঘাড়ের ব্যথাকেই মাথা ব্যথা হিসেবে চিনে থাকি। মাথা ব্যথা শুরু হলে আমাদের প্রচন্ড অস্বস্তি লাগে। আর সেই মাথা ব্যথা যদি হয় ঘন ঘন তাহলে তো কোন কথাই নেই। কিন্তু এই ঘন ঘন মাথা ব্যথা হওয়ার অনেকগুলো কারণ রয়েছে যে কারণগুলো আজকে নিচে উল্লেখ করা হলো।

  • ধূমপান
  • অতিরিক্ত পরিমাণে টিভি ও কম্পিউটার বা মোবাইল দেখা
  • অতিরিক্ত শব্দ দূষণ
  • বায়ুমন্ডলের অস্থিরতা
  • খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তন
  • মানসিক চাপ
  • চোখের রোগ
  • উচ্চ রক্তচাপ
  • মাইগ্রেন
  • দন্তশূল
  • উত্তেজক পদার্থ
  • সাইনাস সংক্রমণ
  • অ্যারোমাথেরাপি
  • কেন্দ্রীয় কানের সংক্রমণ
  • ডিসঅর্ডারস ইত্যাদি

সাধারণত উপরে উল্লেখিত কারণ গুলোর জন্য ঘন ঘন মাথা ব্যথা হয়ে থাকে। আপনি যদি ঘন ঘন মাথা ব্যাথা থেকে মুক্তি পেতে চান, তাহলে উপরে লিখিত কারণগুলো বর্জন করুন।

মাথা ব্যাথা হলে করণীয় কি

আমরা উপরের উল্লেখিত প্যারাগুলো থেকে মাথা ব্যথা কেন হয়, মাথা ব্যথা কোন রোগের লক্ষণ, ঘন ঘন মাথা ব্যথার কারণ কি এই বিষয়গুলো সম্পর্কে জেনেছি। এখন আমরা জানবো মাথা ব্যথা হলে আমাদের করণীয় কি এই সম্পর্কে। চলুন তাহলে জেনে নেই মাথা ব্যথা দূর করতে হলে আমাদের কি কি করা উচিত।

  • আলো কমানোঃ আপনার মাথা যন্ত্রণা শুরু হলে প্রথমে আপনার ঘরের অথবা কম্পিউটার স্ক্রিন মোবাইল ফোন বা ল্যাপটপের আলো কমিয়ে দিন।
  • চা-কফি বা লবঙ্গঃ মাথা ব্যথা কমানোর জন্য চা-কফি বা লবঙ্গ বিশেষ ভূমিকা রাখে। আপনার মাথা যন্ত্রণা কমানোর জন্য এই তিনটি পানীয় পান করতে পারেন।
  • গোসল করাঃ আপনার মাথা ব্যথা যদি অসহনীয় পর্যায়ে চলে যায় তাহলে গোসল করতে পারেন। ঠান্ডা পানি দিয়ে গোসল করলে আপনার মাথা ব্যথা অনেক কমে যাবে।
  • ম্যাসাজঃ আপনি অল্প কিছু সময়ের জন্য আপনার কপালের দুই পাশের রগ বা ঘাড়ের উপর আঙ্গুলের ডগা দিয়ে ম্যাসাজ করুন। এতে করে আপনার মাথা ব্যথা অনেক কমে যাবে।
  • পানি পান করুনঃ মাথা ব্যথা শুরু হলে আপনি পানি পান করতে পারেন। পানি পান করলে মাথা ব্যাথা অনেকাংশে কমে যাবে।
  • পুদিনা পাতার রসঃ পুদিনা পাতায় ম্যানথল ও ম্যানথন নামের পদার্থ রয়েছে। যা মাথা ব্যথা দূর করতে অনেক ভূমিকা রাখে। মাথা ব্যথা দূর করতে এই রস কপালে মাখতে হবে।
  • পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুমানোঃ মাথা ব্যথা দূর করতে হলে আপনাকে অন্তত প্রতিদিন ৮ ঘন্টা ঘুমাতে হবে। তাহলে আপনি মাথা ব্যাথা থেকে মুক্তি পাবেন।

আরো পড়ুনঃ ফোড়া পাকানোর ঘরোয়া উপায়

উপরে উল্লেখিত পদ্ধতিগুলো ব্যবহার করার পরেও যদি আপনার মাথা ব্যাথা না কমে। তাহলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

মাথা ব্যথা কমানোর ১০টি ঔষধের নাম

ইতিমধ্যে আমরা মাথা ব্যথার বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে উপরের প্যারাগুলো থেকে জেনেছি। এখন আমরা মাথা ব্যথা কমানোর ১০ টি ওষুধের নাম জানবো। যেগুলো ব্যবহারে মাথা ব্যথা কমানো সম্ভব।

ওষুধ ১০ টির নাম হলো-

  • Anilic ( এনিলিক)
  • Lograin (লজরিন) 
  • Arain (আরিন)
  • Migrex (মিগরেক্স)
  • Mygan (মাইগান)
  • Migratol (মিগ্রাটল)
  • Tolfi (টলিফ)
  • Tufnil (টাফনিল)
  • Namitol (নামিটোল)
  • Minopa (মিনোপা)
  • Tolmic (টলমিক)

লেখকের মতামত

আমার মতে, আপনারা যদি সামান্য মাথা ব্যথায় আক্রান্ত হন তাহলে মাথা ব্যথা দূর করার যে করণীয় গুলো উপরে উল্লেখ করা হয়েছে সেগুলো অনুসরণ করবেন তারপরও যদি আপনার মাথা ব্যথা ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে না কমে তাহলে ডাক্তারের পরামর্শ নিন। এই রকম স্বাস্থ্য বিষয়ক পোস্ট পড়তে নিয়মিত এই ব্লগার মামুন ওয়েবসাইটটি ভিজিট করুন।

Share this post with your friends

See previous post See Next Post
No one has commented on this post yet
Click here to comment

Please comment according to Blogger Mamun website policy. Every comment is reviewed.

comment url