সবচেয়ে উপকারী ব্যায়াম - ব্যায়াম করার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জেনে নিন

আমরা সবাই জানি "স্বাস্থ্যই সকল সুখের মূল"। আর এই স্বাস্থ্য সুস্থ রাখার জন্য দরকার প্রতিনিয়ত ব্যায়াম। তাই আজকে আর্টিকেলটিতে আমরা ব্যায়াম কত প্রকার, ব্যায়াম করার পদ্ধতি, সবচেয়ে উপকারী ব্যায়াম, ব্যায়াম করার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে আলোচনা করবো। তাই চলুন আর দেরি না করে সবচেয়ে উপকারী ব্যায়াম ও ব্যায়াম করার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জেনে নেই।

সবচেয়ে উপকারী ব্যায়াম
আপনারা যারা সবচেয়ে উপকারী ব্যায়াম ও ব্যায়াম করার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জানতে চান তারা নিচে আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন। কারণ, নিজের আর্টিকেলটিতে ব্যায়াম সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।

ভূমিকা

ব্যায়াম" আমাদের দৈনন্দিন জীবনে খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। আমাদের মাঝে অনেকেই আছে যারা নিয়মিত ব্যায়াম করে কিন্তু ব্যায়াম কত প্রকার, ব্যায়াম করার সঠিক পদ্ধতি, ব্যায়াম কোন সময় করতে হয়, ব্যায়াম করার উপকারিতা ও অপকারিতা ইত্যাদি সম্পর্কে বিস্তারিত জানে না। যার ফলে তারা বিভিন্ন শারীরিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়।

তাই আজকের আর্টিকেলটিতে আমি ব্যায়াম করার উপকারিতা ও অপকারিতা এবং ব্যায়াম সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করবো। যাতে করে আপনারা ব্যায়াম সম্পর্কে পূর্ণ ধারণা পান। তাই চলুন আর দেরি না করে ব্যায়াম সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেই।

ব্যায়াম কত প্রকার

সুস্থ শরীর গঠন এবং স্বাভাবিক বিকাশের ক্ষেত্রে ব্যায়ামের ভূমিকা অপরিসীম। শরীরকে সুস্থ ও সবল রাখার জন্য যেমন খাদ্যের প্রয়োজন, তেমনি শরীরের গঠন বিন্যাস এবং শরীরকে রোগমুক্ত ও সতেজ রাখার জন্য ব্যায়াম অপরিহার্য। শুধু পুষ্টিকর খাবারই একজন মানুষকে পরিপূর্ণভাবে সুস্থ রাখতে পারে না।

আরো পড়ুনঃ ডায়াবেটিস হলে কি কি সমস্যা হয়

শরীরকে পরিপূর্ণ সুস্থ রাখার জন্য পুষ্টিকর খাবারের পাশাপাশি দরকার নিয়মিত ব্যায়াম করা। তাই আপনি যে বয়সেরই হোন না কেন,আপনি যদি আপনার শরীরকে সুস্থ, সবল, রোগমুক্ত ও সতেজ রাখতে চান তাহলে নিয়মিত ব্যায়াম করুন। এখন নিয়মিত ব্যায়াম করতে হলে, আপনাকে প্রথমে জানতে হবে ব্যায়াম কত প্রকার।

ব্যায়াম বিভিন্ন রকমের হতে পারে। তবে আমরা সামগ্রিকভাবে ব্যায়ামকে তিন ভাগে ভাগ করতে পারি।

  • সাধারণ ব্যায়াম
  • যোগ ব্যায়াম
  • যান্ত্রিক ব্যায়াম

সাধারণ ব্যায়ামঃ যে সকল ব্যায়াম কোনো কিছুর সাহায্য ছাড়া করা যায় তাকে আমরা সাধারণ ব্যায়াম বলে থাকি। উদাহরণস্বরূপ- খালি হাতে ব্যায়াম, খোলা জায়গায় হাঁটাহাটি করা, মেঝেতে দাঁড়িয়ে হাত-পার দ্বারা ব্যায়াম করা ইত্যাদি।

যোগ ব্যায়ামঃ যখন বিশেষ কোনো নিয়মের মাধ্যমে কোন ব্যায়াম করা হয় তখন তাকে যোগ ব্যায়াম বলে। প্রাচীনকালের সাধকরা মূলত এই ব্যায়াম আবিষ্কার করেছেন। আমাদের শরীরের প্রতিটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ, পেশী, অস্তিমজ্জাগুলোকে সুস্থ-সজীব ও কার্যকর করে তুলতে এই ব্যায়ামের ভূমিকা অপরিসীম।

যোগ ব্যায়াম কে সকল ব্যায়ামের মধ্যে সেরা ও কার্যকর ব্যায়াম বলা যেতে পারে। এই ধরনের ব্যায়াম খুব একটা সহজ ব্যায়াম নয়। এই ব্যায়াম করতে হলে অনেকগুলো নিয়ম-কানুন মেনে করতে হয়। তাই এই ব্যায়ামকে একটু জটিল ব্যায়ামও বলা হয়ে থাকে।

যান্ত্রিক ব্যায়ামঃ যে ধরনের ব্যায়াম বিশেষ যন্ত্রের সাহায্যে করা হয় তাকে যান্ত্রিক ব্যায়াম বলে। যান্ত্রিক ব্যায়াম যেসব যন্ত্রের সাহায্যে করা হয় তার নাম নিচে দেওয়া হলো-

  • ডাম্বেল
  • ফ্লোর ম্যাট
  • হ্যান্ড গ্রিপ
  • সিট আপ বার
  • টামি ট্রিমার
  • পুশ আপ বার
  • চেস্ট পুল
  • রোপ
  • বডি ফিটনেস হুইল
  • আর্ম ডেভেলপার
  • সাইকেল
  • ট্রেডমিল ইত্যাদি

আশা করি, আপনারা ব্যায়ামের প্রকারভেদ সম্পর্কে জানতে পেরেছেন।

ব্যায়াম করার পদ্ধতি

আমাদের শরীরকে সুস্বাস্থ্যবান ও কর্মক্ষম রাখার ক্ষেত্রে ব্যায়াম খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এটা আমরা সবাই জানি। তবে ব্যায়ামের সঠিক পদ্ধতির না জেনে যদি আমরা ভুল পদ্ধতিতে ব্যায়াম করি তাহলে উপকারের চাইতে ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। তাই ব্যায়াম করার আগে আমাদের ব্যায়াম করার সঠিক নিয়ম বা পদ্ধতি গুলো জেনে রাখা উচিত। 

ব্যায়াম করার নিয়ম গুলো হলো-

  • বয়স ও শারীরিক ক্ষমতা অনুযায়ী ব্যায়ামের ধরন নির্বাচন করা।
  • ব্যায়াম করার শুরুতেই আপনার ওজন, বিএমআই ইত্যাদি লিখে রাখুন, যাতে করে আপনার উন্নতি হচ্ছে না অবনতি হচ্ছে তা প্রতিমাসে খেয়াল করতে পারেন। 
  • ব্যায়াম করার ক্ষেত্রে ঢিলেঢালা জামা কাপড় ব্যবহার করুন।
  • ভর পেটে কখনোই ব্যায়াম করবেন না। খাওয়ার অন্তত ২ ঘণ্টা পর ব্যায়াম শুরু করুন।
  • ভারী ব্যায়াম শুরু করার আগে প্রথমে আপনি ওর্য়াম আপ বা হ্যান্ড ফ্রি করে নিন।
  • ব্যায়াম শুরু করার সময় আপনার নিঃশ্বাস স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করবেন। 
  • ব্যায়াম করার সময় শারীরিক অস্বস্তি বোধ করলে ব্যায়াম করা বন্ধ করুন।
  • প্রতিদিন নির্দিষ্ট একটি সময়ে ব্যায়াম করার চেষ্টা করুন। হোক সেটা সকাল বা সন্ধ্যা।
  • মন খারাপ থাকলে ব্যায়াম করবেন না। প্রথমে মন ভালো করবেন, তারপর ব্যায়াম শুরু করুন।
  • একেক ধরনের বয়সের জন্য একেক ধরনের ব্যায়াম রয়েছে। এক্ষেত্রে আপনি একজন ভালো জিমট্রেনার বা চিকিৎসকের পরামর্শ নিন ইত্যাদি। 

এই ধরনের আরো অনেক ব্যায়াম করার পদ্ধতি রয়েছে। যেগুলো আপনি বিভিন্ন ওয়েবসাইট থেকে পেয়ে যাবেন। কিন্তু আপনি যদি বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে নিয়মিত ব্যায়াম না করেন তাহলে, অদূর ভবিষ্যতে বিভিন্ন জটিল রোগে আক্রান্ত হতে পারেন। তাই সুস্থ থাকতে চাইলে নিয়মিত ব্যায়াম করুন। 

আপনি যদি উপরে উল্লেখিত নিয়ম গুলো মানতে নাও পারেন, অন্তত প্রতিদিন হাটার অভ্যাস গড়ে তুলুন। এতে করে আপনি সুস্থ থাকবেন।

ব্যায়াম না করলে কি হয়

আমরা সবাই জানি সুস্থ ও রোগমুক্ত দেহ গঠনের জন্য ব্যায়াম খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। নিয়মিত ব্যায়াম করলে আপনি যেমন সুঠাম দেহের অধিকারী হবেন। তেমনি আপনি যদি ব্যায়াম করা বন্ধ করে দেন তাহলে ঠিক উল্টোটা হতে পারে। বর্তমানে স্বাস্থ্যবিষয়ক একটি ওয়েবসাইট জানিয়েছে ব্যায়াম না করার কিছু অপকারিতা সম্পর্কে। 

আরো পড়ুনঃ ডায়াবেটিস থেকে বাচাঁর ঘরোয়া উপায়

ব্যায়াম না করলে সাধারণত যে সকল সমস্যা হয় সেগুলো নিচে দেওয়া হলো-

  • মাংস পেশি শিথিল হয়ে পড়ে
  • পেশির ক্ষমতা ধীরে ধীরে কমতে থাকে
  • শরীর দুর্বল হতে থাকে 
  • অনেকের ঘুমোতে সমস্যা দেখা দিতে পারে
  • ব্যায়াম বন্ধ করে দিলে আমাদের শরীরের রক্তের শর্করার মাত্রার তারতম্য ঘটতে পারে
  • আমরা সবাই জানি ব্যায়াম করলে মানসিক সমস্যা দূর হয়। কিন্তু হুট করে ব্যায়াম বন্ধ করে দিলে মানসিক সমস্যাগুলো আবার দেখা দিতে পারে।
  • শারীরিক গঠন দ্রুত নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা থাকে
  • ব্যায়াম বন্ধ করে দিলে ভুঁড়ি আবার ফিরে আসবে ইত্যাদি।

তাই আমাদের উচিত ‍নিয়মিত ব্যায়াম করা।

ব্যায়াম করার সঠিক সময়

আমাদের অনেকেরই ধারণা ব্যায়াম হয়তো সব সময় করা যায়। কিন্তু "না" এই ধারণাটি সম্পূর্ণ ভুল। আমাদের নিয়মিত খাওয়ার জন্য যেমন নির্দিষ্ট সময় রয়েছে তেমনি ব্যায়াম করার জন্য কিছু নির্দিষ্ট সময় রয়েছে। তাই ব্যায়াম করার আগে আমাদের জানতে হবে ব্যায়াম করার সঠিক সময় সম্পর্কে। 

নিচে ব্যায়াম করার সঠিক সময় সম্পর্কে আলোচনা করা হলো-

সকাল

  • আমাদের মাঝে অনেকে আছে যারা ঘুম থেকে উঠে বিছানায় ব্যায়াম শুরু করেন। তবে এ সময় ভারী ব্যায়াম না করাই ভালো।
  • ঘুম থেকে ওঠার আধঘন্টা পর হালকা জগিং বা মর্নিং ওয়ার্ক করুন।
  • তারপর ফ্রেশ হয়ে নাস্তা করার কয়েক ঘন্টা পর ব্যায়াম শুরু করুন।
  • আর একটা কথা মনে রাখবেন খালি পেটে কখনোই ভারী ব্যায়াম করবেন না। 

বিকেল

  • ব্যায়াম করার সবচেয়ে উপযুক্ত সময় হচ্ছে বিকেল ২টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত এই সময়ে।
  • কারণ এই সময় শরীরের তাপমাত্রা সবচেয়ে বেশি থাকে।
  • এই সময় ব্যায়াম করলে শরীর মজবুত হয়।

সন্ধ্যা 

  • যোগব্যায়াম করার জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত সময় হচ্ছে সন্ধ্যা।
  • এছাড়া আপনি এই সময় আপনি সাইক্লিং বা ট্রেডমিলও করতে পারেন।

উপরে উল্লেখিত সময় গুলোর মধ্যে ব্যায়াম করার সবচেয়ে উপযুক্ত সময় হচ্ছে বিকেল দুইটা থেকে সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত। তাই আমার মতে আপনারা যারা ব্যায়াম করতে ইচ্ছুক তারা এই সময়টা বেছে নেবেন।

সবচেয়ে উপকারী ব্যায়াম

বর্তমানে আমাদের মাঝে অনেকেই অনেক ধরনের ব্যায়াম করে থাকে কিন্তু এর মধ্যে সবচেয়ে উপকারী ব্যায়াম কোনগুলো এ সম্পর্কে অনেকেই জানেনা। তাই নিচে সবচেয়ে উপকারী ব্যায়ামগুলোর একটি লিস্ট দেওয়া হলো-

  • ওয়ার্ম আপ
  • কাঁধের ব্যায়াম
  • পুশ-আপ
  • পায়ের ব্যায়াম
  • ওয়াল স্কোয়াট
  • লাঙ্গস
  • সাঁতার
  • দৌঁড়ানো
  • সাইক্লিং ইত্যাদি।

ব্যায়াম করার উপকারিতা

কথায় আছে না ব্যবহার করো নয়তো ক্ষয়ে যাবে অথবা ফেলে রাখলে মরচে পড়বে। এরকম প্রবাদ বাক্য আমাদের শরীরের জন্য অনেক বেশি প্রযোজ্য। আপনি যদি আপনার শরীর সুস্থ রাখার জন্য নিয়মিত ব্যায়াম না করেন তাহলে আপনার শরীরের পেশি হয়ে পড়বে থলথলে, নিস্তেজ ও দুর্বল।

এছাড়াও আপনার শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ যেমন হার্ট, ফুসফুস, লিভার ইত্যাদি ঠিকমতো কাজ করবে না। তাই এই সবকিছু ঠিকঠাক রাখার জন্য দরকার নিয়মিত ব্যায়াম। আর এই ব্যায়ামের উপকারিতা অনেক। 

নিচে ব্যায়ামের  কিছু উপকারিতা সম্পর্কে আলোচনা করা হলো।

১। রোগ প্রতিরোধ করেঃ রোগ মানুষের সবচেয়ে বড় শত্রু। বর্তমান পৃথিবীতে এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া মুশকিল যে মানুষ কোন প্রকার রোগে ভোগেনি। মানুষ হিসেবে আমাদের সবচেয়ে বড় একটি চাওয়া হচ্ছে রোগ মুক্ত জীবন। আর এই রোগ মুক্ত জীবনের জন্য দরকার নিয়মিত ব্যায়াম। নিয়মিত ব্যায়াম আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। তাই সুস্থ থাকার জন্য ব্যায়ামের কোন বিকল্প নেই।

২। মানসিক চাপ কমায়ঃ একটি গবেষণায় দেখা গেছে যারা নিয়মিত ব্যায়াম করে তারা অন্যদের তুলনায় ৫০ শতাংশ কম মানসিক চাপে ভোগেন।

৩। ব্যায়াম মনকে চাঙ্গা করেঃ নিয়মিত ব্যায়াম করার মাধ্যমে নানা রকম রাসায়নিক পদার্থ আমাদের মস্তিষ্ক থেকে নির্গত হয়। যার ফলে আমাদের শরীর ও মন দুটোই ফুরফুরে ও চাঙ্গা থাকে।

৪। ওজন নিয়ন্ত্রণ করেঃ সুস্থ থাকার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি ব্যাপার হল আমাদের শরীরের বাড়তি ওজন ও মেদ কমিয়ে ফেলা। আর এই বাড়তি ওজন ও মেদ কমানোর ক্ষেত্রে ব্যায়ামের কোন বিকল্প নেই। নিয়মিত ব্যায়াম আমাদের শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণ রাখে। 

৫। শরীরকে শক্তিশালী করেঃ নিয়মিত ব্যায়াম আমাদের শরীরের মাংসপেশির গাঁথুনি ভালো ও শক্তিশালী করে তোলে।

আরো পড়ুনঃ সকালে খালি পেটে কি খেলে মোটা হওয়া যায় 

৬। কর্মস্পৃহা বাড়ায়ঃ নিয়মিত ব্যায়াম আমাদের শরীরকে সারাদিন কর্মক্ষম রাখবে ও এনার্জি দেবে। ব্যায়াম করলে আমাদের শরীরের অক্সিজেন পরিমাণ বেড়ে যায়। যা আমাদের কাজ করার প্রতি আগ্রহী করে তুলবে।

৭। ভালো ঘুম হয়ঃ নিয়মিত ব্যায়াম করলে আমাদের শরীর অনেক ক্লান্ত হয়। যার ফলে আমাদের রাতের ঘুম অনেক ভালো হয় ইত্যাদি। 

এছাড়াও ব্যায়াম করার আরো অনেক উপকারিতা আছে যেগুলো আপনারা অনলাইনে বিভিন্ন ওয়েবসাইটের মাধ্যমে জানতে পারবেন।

ব্যায়াম করার অপকারিতা

উপরে আমরা ব্যায়াম করার উপকারিতা সম্পর্কে জেনেছি। এছাড়াও ব্যায়াম করার অন্যান্য বিষয় সম্পর্কেও জেনেছি। এখন কথা হচ্ছে সকল জিনিসেরই ভালো-মন্দ দুটি দিক থাকে। ব্যায়ামের ক্ষেত্রেও এর ব্যতিক্রম নয়। ব্যায়ামেও ভালো ও খারাপ দুটি দিক রয়েছে। 

এখন আমরা ব্যায়ামের অপকারিতা সম্পর্কে নিচে আলোচনা করবো।

১। অতিরিক্ত ব্যায়াম ব্যথার সৃষ্টি করেঃ প্রথম প্রথম ব্যায়াম করলে শরীরে ব্যথা সৃষ্টি হয়। তবে এই ব্যথা কিছুদিন ব্যায়াম করার পর সেরে যায়। ব্যায়াম সাধারণত আমাদের দেহের টিস্যুগুলোকে পুননির্মাণ করে ও শরীরকে আগের থেকে শক্তিশালী করে তোলে।তবে অতিরিক্ত ব্যায়াম আমাদের দেহের ব্যথার সৃষ্টি করতে পারে।

২। ওভার ট্রেনিং সিন্ড্রোমঃ যখন একজন ক্রীড়াবিদ বারবার তাদের ক্ষমতার বাইরে ব্যায়াম করে তখন মূলত ওভার ট্রেনিং সিন্ড্রোম ঘটে। ওভার ট্রেনিং সিন্ড্রোম ঘটার বেশ কিছু লক্ষণ রয়েছে যেমন-

  • ক্লান্তি 
  • বিষন্নতা 
  • মেজাজ পরিবর্তন 
  • ঘুমের ব্যাঘাত 
  • শারীরিক কর্মক্ষমতা হ্রাস 
  • মানসিক মনোযোগের অভাব 
  • চরম তৃষ্ণা 
  • ক্ষুধার অভাব 
  • মাথাব্যথা 
  • দ্রুত ওজন হ্রাস বা বৃদ্ধি
  • জয়েন্ট এবং পেশিতে ব্যথা বৃদ্ধি 

৩। কার্ডিওভাসকুলার সমস্যাঃ অত্যধিক ব্যায়াম আমাদের শরীরের ধমনী বা আর্টারির আকার বৃদ্ধি করতে পারে। এমনকি আমাদের দেহের হৃদপিন্ডের গতির   ছন্দপতনও ঘটাতে পারে।

৪। অত্যাধিক স্ট্রেস ও নার্ভ প্রবলেমঃ অত্যাধিক ব্যায়াম আমাদের শরীরের খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি হরমোন কর্টিসল এর মাত্রা বৃদ্ধি করে দেয়। যার ফলে আমাদের দেহের স্ট্রেস হরমোন ও নার্ভের উপর চাপ পরে।

৫। ব্যায়াম জয়েন্টের ক্ষতি করতে পারেঃ আপনারা যদি ব্যায়ামের সঠিক পদ্ধতি বা নিয়ম না জেনে ভুলভাল অঙ্গভঙ্গিতে ব্যায়াম করেন তাহলে আপনাদের শরীরে জয়েন্টের ব্যথা হতে পারে ইত্যাদি।

ব্যায়াম করার পর খাবার তালিকা

আপনি যদি নিয়মিত ব্যায়াম করে থাকেন? তাহলে লক্ষ্য করে দেখবেন ব্যায়াম করার পর আপনার প্রচন্ড খিদে পাবে। ব্যায়াম করার পর সাধারণত আমাদের শরীর খুব ক্লান্ত হয়ে যায়। আর এই ক্লান্তির মাধ্যমে আপনার শরীর আপনাকে বুঝিয়ে দেয় যে তার এনার্জি শেষ।

গাড়ি চালানোর জন্য যেমন তেলের প্রয়োজন হয়, তেমনি শরীরের এনার্জি ফিরিয়ে আনার জন্য দরকার সুষম খাদ্য। এখন প্রশ্ন তাহলে ব্যায়াম করার পর কি ধরনের খাবার খাওয়া উচিত।

চলুন তাহলে জেনে নেই- ব্যায়াম করার পর কি ধরনের খাবার খেলে আমাদের শরীরের গঠন আরো ভালো ও মজবুত হবে। 

ব্যায়ামের পর প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া।

প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার গুলোর একটি তালিকা নিচে দেওয়া হলো-

  • পশু বা উদ্ভিদভিত্তিক প্রোটিন পাউডার 
  • গ্রীক দই 
  • সালমোন মাছ 
  • মুরগি 
  • প্রোটিন বার 
  • টুনা 
  • দুধ 
  • ছানা 
  • ডিম 
  • কুটির পনির 

ব্যায়ামের পর শর্করা সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া। 

শর্করা সমৃদ্ধ খাবার গুলোর একটি তালিকা নিচে দেওয়া হলো-

  • মিষ্টি আলু 
  • কুইনোয়া এবং অন্যান্য শস্য 
  • ধান কেক 
  • চাল 
  • ওটমিল 
  • আলু 
  • ফল যেমন (আনারস, বেবি, কলা, কিউই) 
  • বাজরা 
  • লাল চালের ভাত 
  • পাস্তা 
  • সমগ্র শস্য রুটি 
  • চকলেট দুধ

ব্যায়ামের পর চর্বিযুক্ত খাবার খাওয়া। 

চর্বিযুক্ত খাবার গুলোর একটি তালিকা নিচে দেওয়া হলো-

  • বাদাম 
  • বীজ 
  • ট্রেল মিশ্রণ (শুকনো ফল এবং বাদাম) 
  • বাদাম মাখন 
  • আভাকাডো 
  • ফ্ল্যাক্সসিড

আর একটা কথা অবশ্যই মাথায় রাখবেন ব্যায়াম করার আগে ও পরে বা ব্যায়াম করার মাঝে মাঝে প্রচুর পরিমাণে পানি পান করবেন।

উপসংহার

প্রিয় পাঠক, আশা করি আপনারা উপরের পোস্টটি সম্পূর্ণ পড়ে ব্যায়াম সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পেরেছেন। উপরের পোস্টটিতে আমরা ব্যায়ামের বিভিন্ন প্রকারভেদ, ব্যয়াম করার বিভিন্ন পদ্ধতি, ব্যায়াম করার সঠিক সময় ইত্যাদি বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছি। 

এছাড়াও ব্যায়াম করার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। আপনার যদি এই পোস্টটি পড়ে ভালো লাগে এবং এরকম আরো পোস্ট পড়তে চান তাহলে আমাদের এই মামুন ওয়েবসাইট নিয়মিত ভিজিট করুন।

Share this post with your friends

See previous post See Next Post
No one has commented on this post yet
Click here to comment

Please comment according to Blogger Mamun website policy. Every comment is reviewed.

comment url